তাহিরপুরে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বহাল রাখুন
- আপলোড সময় : ০২-১২-২০২৫ ০২:৫২:০৪ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০২-১২-২০২৫ ০২:৫২:০৪ পূর্বাহ্ন
হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জের অন্যতম দুর্গম উপজেলা তাহিরপুর। যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মসংস্থান -সবক্ষেত্রেই পিছিয়ে থাকা এই জনপদের মানুষের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) প্রতিষ্ঠা ছিল এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার। ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট একনেকে অনুমোদিত ৫০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে তাহিরপুরের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে আশার আলো জেগেছিল। ধারণা করা হয়েছিল, এই টিটিসি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এখানকার হাজারো যুবক দক্ষতা অর্জন করে দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে - দূর হবে দীর্ঘদিনের বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের শৃঙ্খল।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে সম্প্রতি জানা গেছে, প্রকল্প থেকে তাহিরপুরকে বাদ দিয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি জগন্নাথপুর উপজেলায় স্থানান্তরের প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছেন তাহিরপুরবাসী। কারণ, যোগাযোগব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা এবং আর্থিক অনটনের কারণে জগন্নাথপুর বা সিলেটে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা এই উপজেলার দরিদ্র পরিবারের জন্য প্রায় অসম্ভব। যেখানে এখনও সাতটির মধ্যে ছয়টি ইউনিয়নের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ নেই, যেখানে গড় শিক্ষার হার মাত্র ৩১ শতাংশ, যেখানে একটি সরকারি স্কুল পর্যন্ত পর্যাপ্ত শিক্ষক ধরে রাখতে পারে না - সেখানে টিটিসি শুধু একটি স্থাপনা নয়, বরং উন্নয়ন ও পরিবর্তনের প্রধান চালিকাশক্তি।
তাহিরপুরবাসীর যুক্তি উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। বছরজুড়ে কৃষি ও মৌসুমি শ্রমই এখানকার কর্মসংস্থানের মূল ভরসা। বালু ও কয়লা শ্রমিকদেরও বছরের অধিকাংশ সময় কর্মহীন থাকতে হয়। ফলে অধিকাংশ তরুণ উপার্জনের আশায় শহরমুখী হয়, শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় পরিবারগুলো। এমন একটি এলাকার জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন ছিল যুগোপযোগী, ন্যায্য ও অত্যাবশ্যক সিদ্ধান্ত।
এমতাবস্থায় প্রকল্পটি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত ন্যায়সংগত বলে মনে হয় না। যে উপজেলায় প্রকৃতপক্ষে এই প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি, সেখানে পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত সচ্ছল যোগাযোগব্যবস্থা ও সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এলাকায় কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ এক ধরনের বৈষম্যকে আরও ঘনীভূত করবে। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত - সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দেওয়া। তাহিরপুরের ক্ষেত্রে সেই নীতির ব্যত্যয় ঘটছে।
মানববন্ধন এবং স্মারকলিপি প্রদান করে উপজেলার গণমানুষ যে প্রতিবাদ জানিয়েছে- তা যুক্তিসঙ্গত, দায়িত্বশীল এবং উন্নয়নমুখী মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি আহ্বান থাকবে, সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করে টিটিসি কেন্দ্রটি তাহিরপুরেই বহাল রাখা হোক।
হাওরের মানুষ বহুদিন ধরে বঞ্চনার ইতিহাস বয়ে বেড়াচ্ছে। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন সেই ইতিহাস বদলে দেওয়ার একটি বাস্তব সুযোগ ছিল। উন্নয়নকে কেন্দ্রীয় শহর বা সড়কনির্ভর এলাকাগুলোতে সীমাবদ্ধ না রেখে সত্যিকারের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দিতে হবে। তাহিরপুরের টিটিসি বাতিল নয়, বরং এখানকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি জরুরি প্রয়োজন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
